
নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | প্রিন্ট | 836 বার পঠিত
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নির্দেশনা না মেনেই ফারইস্ট ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে এর চেয়ারম্যান হয়েছেন কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালক মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম। এই পর্ষদ গঠনে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) বিধানও লঙ্ঘন করেছেন তিনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে সম্পূর্ণ গায়ের জোরে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ গঠন করেছেন এক সময়ে এস আলমের ঘনিষ্ঠ এই সহযোগী। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর নির্দেশনা না মেনে ফারইস্ট ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান হওয়ায় ফখরুল ইসলাম এবং তার নেতৃত্বাধীন পরিচালনা পর্ষদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে অভিযোগ দিয়েছে সংক্ষুব্ধ পক্ষগুলো।
নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর নির্দেশনা লঙ্ঘন করে ফারইস্টের পর্ষদ গঠন করায় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে সম্প্রতি অভিযোগ দিয়েছেন আমিনুল ইসলাম নামে একজন পলিসি ও শেয়ারহোল্ডার। ২০২৪ সালের ২২ ডিসেম্বর দেয়া ওই চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন কর্তৃক জারিকৃত কর্পোরেট গর্ভনেন্স কোডের-1.(2)(b) (ii) ) ধারা অনুযায়ী কোম্পানির উদ্যোক্তা অথবা পরিচালক অথবা মনোনীত পরিচালকদের সম্পর্কযুক্ত কোন ব্যক্তি কিংবা তাদের ফ্যামিলি মেম্বারগণ স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন না।
কিন্তু বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের ভাইস-চেয়ারম্যান ড. মো. মোকাদ্দেস হোসেইনের আপন বেয়াই (তার ছোট ভাইয়ের ভায়রা) শেখ মোহাম্মদ সোয়াইব নাজিরকে এই আইন লঙ্ঘন করে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের ২৯ জুন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জারি করা বীমাকারীর পরিচালক নির্বাচন বিধিমালা অনুযায়ী, একজন শেয়ারহোল্ডার পরিচালক নির্বাচনের কমপক্ষে একবছর পূর্ব হতে দুই শতাংশ শেয়ার ধারণ করার বিধান রয়েছে, অথচ মোরশেদুল আলম চাকলাদারকে নিয়োগ করার ক্ষেত্রে এই বিধান লঙ্ঘন করা হয়েছে।
এই বিধিমালার ৫নং ধারায় সুস্পষ্টরূপে বলা হয়েছে যে, পরিচালনা পর্ষদের এক-তৃতীয়াংশের অধিক পরিচালক নির্বাচনের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদন নিতে হবে, কিন্তু সম্প্রতি পরিচালনা পর্ষদের সমস্ত পরিচালক পরিবর্তন করা হলেও বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ থেকে কোন অনুমোদন গ্রহণ করা হয়নি।
২০১১ সালের ২২ নভেম্বরে জারিকৃত বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী (SEC/CMRRCD/2009-193/119/ADMIN/34) সকল তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে তাদের নিজ নিজ উদ্যোক্তা ও পরিচালকগণ যৌথভাবে সব সময় নূন্যতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করবে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ১১ মার্চ ২০১৮ তারিখে জারিকৃত নির্দেশনার মাধ্যমে (SEC/SRMIC/2011/1240/634) ডিএসই ও সিএসই এবং সিডিবিএলকে উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার ও পরিচালকগণের যৌথভাবে সব সময়ের জন্য ৩০ শতাংশ শেয়ারধারণের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করে। কিন্তু তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসের মাসিক শেয়ারহোল্ডিং রিপোর্টে দেখা যায় উদ্যোক্তা ও পরিচালকগণ যৌথভাবে ২০.০৮ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছে কিন্তু তারা জালিয়াতি করে সাধারণ শেয়ারহোল্ডার ট্রেড নেক্সট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড এর ৯.৯১ শতাংশ এবং জুপিটার বিজনেস লিমিটেডের ১.৯০ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার ও পরিচালকবৃন্দের মাসিক শেয়ারহোল্ডিংয়ের সাথে যোগ করে ৩৯.৮৯ শতাংশ দেখাচ্ছে। এটি সাধারণ শেয়ারহোল্ডার, ঢাকা ও চট্টগ্রাম এক্সচেঞ্জ লি. এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাথে প্রতারণার শামিল।’
নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে দেয়া ওই চিঠিতে তিনি আরো লিখেছেন, ‘আমরা শেয়ারহোল্ডাগণ তালিকাভুক্ত কোম্পানির বিজনেস পারফরমেন্স, কোম্পানির ডিভিডেন্ড, পরিচালকবৃন্দের শেয়ারহোল্ডিংসহ অন্যান্য বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে শেয়ারে বিনিয়োগ করি। ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড উদ্যোক্তা ও পরিচালকবৃন্দের শেয়ারহোল্ডিংয়ের বিষয়ে শেয়ারহোল্ডার, বিএসইসি, ডিএসই, সিএসই এবং আইডিআরএর সাথে প্রতারণা করছে যা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’
সরকারের এতগুলো নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের আইন-কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে বে-আইনীভাবে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যানসহ পরিচালনা পর্ষদ কীভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে তা সকল শেয়ারহোল্ডাদের/স্টেকহোল্ডারদেরকে হতবাক ও বিস্মিত করছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে ওই চিঠিতে।
ওই চিঠিতে উল্লেখিত এসব অভিযোগের ব্যাখ্যা চেয়ে ৯ জানুয়ারি ফারইস্ট ইসলামি লাইফকে চিঠি পাঠায় বিএসইসি।
গত ১৬ জানুয়ারি বিএসইসিকে এসব অভিযোগের ব্যাখ্যা পাঠায় ফারইস্ট। বিএসইসিকে এসব অভিযোগের ব্যাখ্যায় ফারইস্টের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘বীমাকারীর কর্পোরেট গর্ভন্যান্স গাইডলাইন-২০২৩’ অনুযায়ী শেখ মোহাম্মদ শোয়েব নাজির-কে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বিগত ০৩-০২-২০২২ তারিখে ফারইস্ট লাইফের বোর্ড পুনঃগঠন করেন। সেই বোর্ডে সাধারণ শেয়ারহোল্ডার ট্রেডনেক্সট ইন্টারন্যাশনাল এবং জুপিটার বিজনেস লিমিটেডকে আনা হয়। উক্ত প্রতিষ্ঠান দুটি জানুয়ারি ২০২২ সালে বাজার হতে ১৯.৮১% শেয়ার ক্রয় করে প্রায় দুই সপ্তাহের মাথায় ফারইস্টের পরিচালনা পর্ষদে আসে। এরই আলোকে ২% শেয়ার ধারণ করা মোরশেদ আলম চাকলাদারকে পরিচালক হিসেবে বোর্ডে আনা হয়েছে। পরিচালনা পর্ষদের এক-তৃতীয়াংশের অধিক পরিচালক নির্বাচনের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদন নিতে হবে মর্মে যে তথ্য দেয়া হয়েছে তার কোন সত্যতা আমরা খুঁজে পাইনি। ৩০% শেয়ার ধারনের বিষয়ে বলা যাচ্ছে যে, ২০২২ সালে বেক্সিমকো বোর্ড বর্তমান উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার দেখিয়েই ৩০% শেয়ার ধারনের বিষয়টির পরিপালন নিশ্চিত করেছিলেন। গত ০৩/০২/২০২২ তারিখের বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের পত্র নং SEC/SRMIC/২০০৫-০৪/১১২৮/৪৮ মারফত পর্ষদ গঠনে যে “টার্মস এন্ড কন্ডিশন” দেয়া ছিল বর্তমান বোর্ড সে আলোকে গঠিত বিধায় এখানে জালিয়াতির অভিযোগ অজ্ঞতাপ্রসূত। এছাড়াও চিঠিতে বর্ণিত অন্যান্য অভিযোগগুলোর কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি।
তবে ফারইস্ট লাইফের পাঠানো এই ব্যাখ্যায় বিএসসি সন্তুষ্ট কি না? অথবা অভিযোগের প্রেক্ষিতে কমিশন কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা জানাতে পারেন নি বিএসইসি’র মুখপাত্র মো. আবুল কালাম।
Posted ৮:১৩ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
bankbimaarthonity.com | rina sristy